1. yousuf.islamics@gmail.com : admin :
  2. editor@sirajganjsangbad.com : Md. Ruhul Amin : Md. Ruhul Amin
শুক্রবার, ০৩ মে ২০২৪, ০২:৫৬ পূর্বাহ্ন
শিরোনাম :
সিরাজগঞ্জে বিএনপির জুস স্যালাইন বিতরণ বেলকুচিতে দুই চেয়ারম্যান প্রার্থী ও সমর্থকদের মধ্যে হামলার অভিযোগ, গ্রেপ্তার ১০ বেলকুচিতে দোয়াত কলম এর পক্ষে ভোট চাওয়ার এক ব্যতিক্রমী উদ্যোগ বেলকুচিতে জনপ্রতিনিধিদের সাথে উপজেলা চেয়ারম্যান প্রার্থী আমিনুল ইসলাম এর মতবিনিময় সিরাজগঞ্জে শ্রমজীবী মানুষের মাঝে ফলের জুস বিতরন করলো বিএনপির নেতারা তাড়াশে পরিচ্ছন্ন কর্মী ও আয়া পদে ২৪ লাখ টাকা উৎকোচ নেওয়ার অভিযোগ সিরাজগঞ্জে জাটকা ইলিশ সংরক্ষণে জনসচেতনতা সভা অনুষ্ঠিত কাজিপুর উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান প্রার্থী খলিল সিরাজীর পাল্টা সংবাদ সম্মেলন বেলকুচিতে তামাইবাসীর সাথে ইঞ্জিনিয়ার আমিনুলের মতবিনিময়, একাত্মতা প্রকাশ গ্রামবাসীর তাড়াশে উপ-নির্বাচনে আতিয়ার বিজয়

রোজার ইতিহাস, গুরুত্ব ও তাৎপর্য

সিরাজগঞ্জ সংবাদ ডেস্ক :
  • প্রকাশের সময় : সোমবার, ১১ মার্চ, ২০২৪
  • ৯২ বার পঠিত

অধ্যাপক ড.রফিকুর রহমান মাদানীঃ

পবিত্র কুরআনের সুরা বাকারার ১৮৩ নম্বর আয়াতে আল্লাহ তাআলা বলেন,

یٰۤاَیُّهَا الَّذِیۡنَ اٰمَنُوۡا کُتِبَ عَلَیۡکُمُ الصِّیَامُ کَمَا کُتِبَ عَلَی الَّذِیۡنَ مِنۡ قَبۡلِکُمۡ لَعَلَّکُمۡ تَتَّقُوۡنَ

হে ঈমানদারগণ! তোমাদের প্রতি রোজা ফরয করা হয়েছে, যেমন তোমাদের আগের লোকেদের প্রতি ফরজ করা হয়েছিল, যাতে তোমরা মুত্তাকী হতে পার। এ আয়াত থেকে আমরা বুঝতে পারি আমাদের পুর্ববর্তী উম্মতের উপরও রোজা ফরয ছিল। তবে রোজা কি ধরনের ছিল বা কতদিনের ছিল বা তাদের রোজা রাখার প্রকৃতি কি ছিল সে সম্পর্কে কুরআন বা হাদীসের সুস্পষ্ট কোনো বক্তব্য পাওয়া যায় না।

আব্দুল্লাহ ইবনে আব্বাস (রা.) এর ছাত্র মুজাহিদ (র.) এর মতে রোজা সকল উম্মতের উপর ফরজ ছিল। তবে তার মতে নুহ (আ) এর পূর্ববর্তী যে সকল উম্মত ছিল তাদের উপরে রোজা ফরজ ছিল না, রোজা ফরজ হওয়া শুরু হয়েছে শুধুমাত্র নুহ (আ) এর প্লাবনের সময় থেকে অর্থাৎ নুহ (আ.) যখন আল্লাহর নির্দেশে প্লাবন থেকে রক্ষার জন্য নৌকায় আরোহণ করেছিলেন এবং বন্যা শেষে যখন তিনি নৌকা থেকে জমিনে অবতরণ করেছিলেন তখন থেকেই রোজা ফরজ হয়েছিল। অর্থাৎ নুহ (আ.) যখন বন্যা শেষে নৌকা থেকে জমিনে অবতরণ করেছিলেন তখন থেকেই তিনি রোজা রাখা শুরু করেছিলেন।

আরেকটি বর্ণনা মতে, হযরত আদম (আ) এর সময় থেকেই রোজা রাখা শুরু হয়েছে। তাদের মতে, হযরত আদম আলাইহি ওয়াসাল্লাম প্রতি চন্দ্র মাসের ১৩, ১৪ এবং ১৫ তারিখে রোজা রেখেছিলেন যা ইসলামের ইতিহাসে প্রথম রোজার সূচনা।

হযরত মুয়াজ ইবনে জাবাল ও হযরত আবদুল্লাহ ইবনে আব্বাস (রা.) থেকে বর্ণিত আছে, রমজানের রোজা ফরজ হওয়ার পূর্ব পর্যন্ত প্রতি চন্দ্র মাসের ১৩, ১৪ এবং ১৫ তারিখে রোজা রাখা ফরজ ছিল যা পুর্ববর্তী উম্মতের জন্যও একইভাবে ফরজ ছিল। এই তিন দিনের রোজার সাথে মহররম মাসের ১০ তারিখের রোজাও অনেকে সংযুক্ত করেছেন।

আবার কেউ কেউ বলেছেন যে, নুহ (আ) এর সময় থেকে তিন দিন রোযা শুরু হয়েছে, যা রমজানের রোজা ফরজ হওয়া পর্যন্ত চলমান ছিল। অর্থাৎ নুহ (আ) এর সময় থেকে রমজানের রোজা ফরজ হওয়ার আগ পর্যন্ত প্রতি চন্দ্রমাস এর এই তিনটি রোজায় প্রত্যেক উম্মতের জন্য ফরজ ছিল।

আশুরার দিনে আল্লাহ রাব্বুল আলামিন মুসা আলাইহি ওয়া সাল্লাম এবং তাঁর কওমকে ফেরাউনের বাহিনী থেকে নদীর মধ্য দিয়ে পথ তৈরি করে বাঁচিয়েছিলেন। মুসা আলাইহি ওয়াসাল্লাম আল্লাহ রাব্বুল আলামীনের নিকট কৃতজ্ঞতা স্বরূপ আশুরার দিনে রোজা রাখতেন।

রমজানের রোজা ফরজ হওয়া সম্পর্কিত পবিত্র কোরআনের আয়াত নাযিল হওয়ার মাধ্যমে মাসে তিন দিন রোজা রাখার বিধান মানসুখ বা রহিত হয়ে গেছে। অর্থাৎ এ আয়াতের মাধ্যমে তিন দিনের পরিবর্তে রমজানে একমাস বা তিরিশ দিন রোজা ফরজ করা হয়েছে।

আবার কেউ কেউ বলেছেন, হজরত আদম (আ) এর কওমের উপরে রোজা ফরজ ছিল আয়্যামুল বীয বা প্রতি চন্দ্র মাসের ১৩, ১৪ এবং ১৫ তারিখে এবং হযরত মুসা আলাইহি ওয়াসাল্লামের কউমের উপরে ফরজ ছিল আশুরার রোজা। মহানবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম মক্কা থেকে মদিনায় হিজরত করে দেখলেন মদিনার ইহুদিরাও রোজা রাখছে। রাসূল (স) তাদের জিজ্ঞাসা করলেন, এটা কোন দিবস যে দিবসকে তোমরা খুব মর্যাদা দিচ্ছ এবং সম্মান দিয়ে রোজা রাখছো? তারা জবাবে বলল, এটা হল ওই দিবস যে দিবসে মহান আল্লাহ রব্বুল আলামীন মুসা আলাইহি ওয়া সাল্লাম এবং তাঁর কওমকে ফেরাউনের কবল থেকে রক্ষা করেছিলেন।

মুসা আলাইহি ওয়াসাল্লাম আল্লাহ রাব্বুল আলামীনের নিকট কৃতজ্ঞতা স্বরূপ তাই আশুরার দিনে রোজা রাখতেন।

এই ঘটনা থেকে আমাদের জন্য একটি শিক্ষা হলো আল্লাহ রাব্বুল আলামিন আমাদের জন্য কোন নিয়ামত দান করলে সেই নিয়ামতের শুকরিয়া আদায় করতে হবে।

আর নিয়ামতের শুকরিয়া আদায় করলে আল্লাহ রাব্বুল আলামীন নিয়ামত আরো বাড়িয়ে দেন পবিত্র কোরআনে আল্লাহ রব্বুল আলামীন বলেছেন:

وَ اِذۡ تَاَذَّنَ رَبُّکُمۡ لَئِنۡ شَکَرۡتُمۡ لَاَزِیۡدَنَّکُمۡ وَ لَئِنۡ کَفَرۡتُمۡ اِنَّ عَذَابِیۡ لَشَدِیۡدٌ

‘যদি তোমরা শুকরিয়া আদায় কর, তবে আমি অবশ্যই তোমাদের বাড়িয়ে দেব, আর যদি তোমরা অকৃতজ্ঞ হও, নিশ্চয় আমার আযাব বড় কঠিন’। (সুরা ইব্রাহীমঃ ৭)

সুরা ইউনুসের ৯০-৯২ আয়াতে আল্লাহ বলেন,

وَ جٰوَزۡنَا بِبَنِیۡۤ اِسۡرَآءِیۡلَ الۡبَحۡرَ فَاَتۡبَعَهُمۡ فِرۡعَوۡنُ وَ جُنُوۡدُهٗ بَغۡیًا وَّ عَدۡوًا ؕ حَتّٰۤی اِذَاۤ اَدۡرَکَهُ الۡغَرَقُ ۙ قَالَ اٰمَنۡتُ اَنَّهٗ لَاۤ اِلٰهَ اِلَّا الَّذِیۡۤ اٰمَنَتۡ بِهٖ بَنُوۡۤا اِسۡرَآءِیۡلَ وَ اَنَا مِنَ الۡمُسۡلِمِیۡنَ

আর আমি বনী ইসরাঈলকে সমুদ্র পার করিয়ে নিলাম। আর ফির‘আউন ও তার সৈন্যবাহিনী ঔদ্ধত্য প্রকাশ ও সীমালঙ্ঘনকারী হয়ে তাদের পিছু নিল। অবশেষে যখন সে ডুবে যেতে লাগল, তখন বলল, ‘আমি ঈমান এনেছি যে, সে সত্তা ছাড়া কোন ইলাহ নেই, যার প্রতি বনী ইসরাঈল ঈমান এনেছে। আর আমি মুসলিমদের অন্তর্ভুক্ত’।

آٰلۡـٰٔنَ وَ قَدۡ عَصَیۡتَ قَبۡلُ وَ کُنۡتَ مِنَ الۡمُفۡسِدِیۡنَ

‘‘এখন (ঈমান আনছ), আগে তো অমান্য করেছ আর ফাসাদকারীদের অন্তর্ভুক্ত থেকেছ।

এ থেকে আমাদের জন্য শিক্ষার বিষয় হল, মৃত্যুর সময় একেবারে ঘনিয়ে আসলে তখন ঈমান আনার ঘোষণা কার্যকর হবে না আল্লাহ্‌র নিকট।

সুতরাং মুসা আলাইহি ওয়াসাল্লাম ১০-ই মহররমে রোজা রেখেছিলেন আল্লাহর প্রতি কৃতজ্ঞতা স্বরূপ আর ইহুদিরা রোজা রাখা শুরু করেছিল (মুসা) এর অনুকরণে। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম দশে মহরমের নিজেও রোজা রাখলেন আর সকলকে রোজা রাখার জন্য আদেশ করলেন। কিন্তু রমজানের রোজা ফরজ হওয়ার পর দশে মহরমের রোজা রাখার ব্যাপারে নির্দেশনা দেয়া হলো যার ইচ্ছা সে দশে মহরমের রোজা রাখবে যার ইচ্ছে রোজা রাখবে না।

তবে দশই মহররম বা আশুরার রোজা রাখা তে অনেক ফজিলত রয়েছে। হাদিসে এসেছে, আবূ হুরায়রাহ (রা.) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ রমযানের সিয়ামের পর সর্বোত্তম সওম হচ্ছে আল্লাহর মাস মুহাররমের সওম এবং ফারয (ফরয) সালাতের পর সর্বোত্তম সালাত হচ্ছে রাতের সালাত। (সহীহ মুসলিম: ১১৬৩)।
অর্থাৎ রমজান মাসের রোজা ছাড়া যত নফল রোজা রয়েছে তার মধ্যে সবচেয়ে শ্রেষ্ঠ রোজা হল মহররম মাসের ১০ তারিখে রোজা। আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মহররমের রোজা নিজে রেখেছেন এবং বলেছেন যারা এই রোজা রাখবে তাদের অতীতের এক বছরের গুনাহ ক্ষমা করে দেয়া হবে। সুবহানাল্লাহ।

রমজানের রোজা ফরজ করার ঘোষণা দিয়ে আল্লাহ বলেন,

شَهۡرُ رَمَضَانَ الَّذِیۡۤ اُنۡزِلَ فِیۡهِ الۡقُرۡاٰنُ هُدًی لِّلنَّاسِ وَ بَیِّنٰتٍ مِّنَ الۡهُدٰی وَ الۡفُرۡقَانِ ۚ فَمَنۡ شَهِدَ مِنۡکُمُ الشَّهۡرَ فَلۡیَصُمۡهُ ؕ وَ مَنۡ کَانَ مَرِیۡضًا اَوۡ عَلٰی سَفَرٍ فَعِدَّۃٌ مِّنۡ اَیَّامٍ اُخَرَ ؕ یُرِیۡدُ اللّٰهُ بِکُمُ الۡیُسۡرَ وَ لَا یُرِیۡدُ بِکُمُ الۡعُسۡرَ ۫ وَ لِتُکۡمِلُوا الۡعِدَّۃَ وَ لِتُکَبِّرُوا اللّٰهَ عَلٰی مَا هَدٰىکُمۡ وَ لَعَلَّکُمۡ تَشۡکُرُوۡنَ

অর্থ: রমজান মাস, যাতে কুরআন নাযিল করা হয়েছে মানুষের জন্য হিদায়াতস্বরূপ এবং হিদায়াতের সুস্পষ্ট নিদর্শনাবলী ও সত্য-মিথ্যার পার্থক্যকারীরূপে। সুতরাং তোমাদের মধ্যে যে মাসটিতে উপস্থিত হবে, সে যেন তাতে সিয়াম পালন করে। আর যে অসুস্থ হবে অথবা সফরে থাকবে তবে অন্যান্য দিবসে সংখ্যা পূরণ করে নেবে। আল্লাহ তোমাদের সহজ চান এবং কঠিন চান না। আর যাতে তোমরা সংখ্যা পূরণ কর এবং তিনি তোমাদেরকে যে হিদায়াত দিয়েছেন, তার জন্য আল্লাহর বড়ত্ব ঘোষণা কর এবং যাতে তোমরা শোকর কর। (সুরা বাকারা: ১৮৫)

এ আয়াত নাজিলের মাধ্যমে পূর্বে রোজা না রাখার যে সুযোগ ছিল অর্থাৎ রোজা না রেখে কেউ যদি কাফফারা দিয়ে দিতো তাহলে তার কোনো অপরাধ থাকতো না- এই সুযোগ রহিত হয়ে গেল। তবে মুসাফির এবং অসুস্থ ব্যক্তিদের জন্য আগে যেমন রোজা না রাখার সুযোগ ছিল, রমজানের রোজা ফরজ হওয়ার পরও মুসাফির এবং অসুস্থ ব্যক্তির জন্য রোজা না রাখার সুযোগ বহাল থাকল।

লেখক:চেয়ারম্যান,ইসলামিক স্টাডিজ বিভাগ,বাংলাদেশ ইসলামিক ইউনিভার্সিটি, ঢাকা ।

Facebook Comments Box
এই জাতীয় আরও খবর

ফেসবুকে আমরা

© স্বত্ব সংরক্ষিত © ২০২৩ সিরাজগঞ্জ সংবাদ
Theme Customized BY Shakil IT Park