সাব্বির মির্জা(তাড়াশ) প্রতিনিধি:
চলনবিলের ভূগর্ভস্থ পানির উপর নির্ভরশীল হয়ে পড়ছেন কৃষকরা। এতে বিলের পানির স্তর আশঙ্কাজনকভাবে নিচে নেমে যাচ্ছে। এক সময় কৃষকরা জমির ওপরে ইঞ্জিনচালিত শ্যালো মেশিন রেখে কৃষি জমিতে সেচ দিতেন। এখন বোরো মৌসুমে আট থেকে ১০ ফুট মাটির গভীরে পাম্প বসিয়ে পানি তুলে জমিতে সেচ দেওয়া হচ্ছে বলে জানিয়েছেন স্থানীয় কৃষকরা।
কৃষকদের সেচ সুবিধার জন্য বিলের মধ্যেকার নদী ও গাঙগুলো খনন করা হচ্ছে। কিন্তু পানি থাকছে না। বিশেষ করে চলনবিলের সবচেয়ে বড়কাটা গাঙের পানি বন্যার পানির সাথেই নেমে গাঙ শুকিয়ে যায়। পানি ধরে রাখার জন্য স্লুইচ গেট অথবা রাবার ড্যাম স্থাপন করতে হবে পরিকল্পিতভাবে। নয়তো কৃষক বিলের পানির সেচ সুবিধা থেকে বঞ্চিতই রয়ে যাবেন। অপরদিকে ভূগর্ভস্থ পানির উপর চাপ বাড়তে থাকবে।
চলনবিল অধ্যূষিত তাড়াশ উপজেলার নওগাঁ ইউনিয়নের দেবিপুর গ্রামের কৃষক হাবিব, মোফাজ্জল ও আব্দুর রশিদ বলেন, আগে জমিতে ৬০ থেকে ৭০ ফুট গভীরতায় পানি পাওয়া যেত। এখন ৮০ থেকে ১২০ ফুট মাটির গভীরতায় পাইপ বসিয়ে জমিতে সেচ দিতে হচ্ছে। বিশেষ করে এলাকার অধিকাংশ কৃষক ৮ ফুট থেকে ১৫ ফুট অবদি মাটির গভীরে পাম্প বসিয়ে পানি তুলে জমিতে সেচ দিচ্ছেন। এসব পাম্প মাটির নিচে স্থাপন করতে গুনতে হচ্ছে অতিরিক্ত ২০ থেকে ৩০ হাজার টাকা। তার পরেও কাঙ্খিত পানির দেখা মিলছে না। কৃষকরা আরও বলেন, চৈত্র-বৈশাখ মাসে পানির স্তর আরও নিচে নেমে যাবে। তখন বৃষ্টি না হওয়া পর্যন্ত পরিপূর্ণ পানি পাওয়া যায় না।
সরেজমিনে দেখা গেছে, চলনবিলের ভাটি এলাকার অধিকাংশ কৃষক ৮ থেকে ১০ ফুট মাটির নিচে পাম্প বসিয়ে উপরে ১২ হর্স পাওয়ার ইঞ্জিনচালিত শ্যালো মেশিন দিয়ে বোরো জমিতে পানি সেচ দিচ্ছেন। আর প্রান্তিক কৃষকরা টাকার অভাবে মাটির নিচে পাম্প স্থাপন করতে না পেরে ৮ থেকে ১০ হর্সের শ্যালো মেশিন ৫ ফুট মাটি খুড়ে গর্তে রেখে জমিতে দিচ্ছেন। কোনো কোনো কৃষক গর্ত খুড়ে রিংয়ের মধ্যে শ্যালো মেশিন বসিয়ে পানি তোলার প্রস্ততি নিচ্ছেন।
তাড়াশ উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা কৃষিবিদ মো. আব্দুল্লাহ আল মামুন বলেন, সাধারণত বৃষ্টি না হওয়া পর্যন্ত পানির স্তর উপরে আসার সম্ভাবনা নেই। চলনবিলের নদী, গাঙ ও খালগুলো পরিকল্পিতভাবে খনন করে সেখান থেকে সেচ সুবিধা নিতে পারলে ভূ-গর্ভস্থ পানির উপর অতিরিক্ত চাপ কমে যেত।
এ প্রসঙ্গে বড়াল রক্ষা আন্দোলন কমিটির সদস্য সচিব ও বাপার কেন্দ্রেীয় কমিটির নির্বাহী সদস্য এসএম মিজানুর রহমান বলেন, চলনবিলের মধ্যকার গুমানী নদী, করতোয়া, বড়াল, নন্দকুঁজা, তুলসী, তেলকুপি, ভাদাই, আত্রাই, হুরাসাগর, বাঙ্গালী ও চিকনাই নদী পুনঃখনন করার সময় এসে গেছে। নয়তো বৃহত্তর এ বিল শুধু পানি শূন্যই নয়, কালের পরিক্রমায় জীববৈচিত্র্যও হারিয়ে যাবে।