সাব্বির মির্জা,(তাড়াশ) প্রতিনিধি:
শস্যভান্ডার খ্যাত সিরাজগঞ্জের তাড়াশ উপজেলায় বিস্তীর্ণ মাঠজুড়ে এখন রসুনের ঘ্রাণ। এ বছর বিনা চাষে রসুনের বাম্পার ফলন হওয়ায় কৃষকের মুখে ফুটেছে হাসি।
সরেজমিনে দেখা যায়, উপজেলার চরহামকুড়িয়া, চরকুশাবাড়ী, নাদোসৈয়দপুর, ধামাইচ, সবুজপাড়া, বিন্নাবাড়ী, দিঘী সগুনা, কুন্দইল, ধামাইচ এলাকার মাঠে মাঠে রসুন তোলায় ব্যস্ত সময় পার করছেন চাষিরা। পুরুষের পাশাপাশি রসুন তোলার কাজে নারীরাও সহযোগিতা করছেন।
উপজেলার সগুনা ইউনিয়নের গ্রামের নওখাঁদা গ্রামের ইউপি সদস্য সিদ্দিক ফকির বলেন, লাভের আশায় আমরা বিনা চাষে রসুন আবাদ করেছি। তারপরও সার-কীটনাশক, শ্রমিকের মজুরি দিয়ে বিঘা প্রতি ৪০ হাজার থেকে ৪৫ হাজার টাকা করে খরচ হয়েছে। এবার পাঁচ বিঘা জমিতে রসুন বুনেছি। ফলনও বাম্পার হয়েছে। ন্যায্য দাম পেলে ভালো লাভ হবে। কারণ বর্তমান বাজারে এক হাজার টাকা থেকে দুই হাজার ২০০ টাকা দরে রসুন বিক্রি করছি।
চরহামকুড়িয়া গ্রামের রসুনচাষি সালাউদ্দিন বলেন, বিনা চাষে প্রায় চার বিঘা জমি লিজ নিয়ে রসুন আবাদ করেছি। এতে বিঘা প্রতি প্রায় ৪০ হাজার টাকা খরচ হয়েছে আমার। তবে এবার যে ফলন হয়েছে ন্যায্য দাম পেলে অনেক টাকা লাভবান হবো কিন্তু বাজারে এক হাজার ১০০ টাকা দরে কিছু রসুন বিক্রি করেছেন বলে জানান তিনি।
নওগাঁ ইউনিয়নের মহিষলুটি গ্রামের কৃষক এবাদ আলী বলেন, গত বছর আমরা কৃষকরা প্রতিমণ রসুন বিক্রি করেছি তিন থেকে সাড়ে তিন হাজার টাকায়। এবারও সেই দাম থাকলে আমাদের মুখে হাসি ফুটবে। লোকসান গুণতে হবে না।
মাগুড়া বিনোদ ইউনিয়নের চরহামকুড়িয়া গ্রামের কৃষক রাজু আহমেদ মিজান আলী ও শাহিন আলীসহ অনেকেই জানান, এ অঞ্চলের চাষিরা প্রতি বছরই বিনা চাষে রসুন আবাদ করেন। ধানের আবাদের লাভ খুব কম হওয়ায়, রসুন চাষে আগ্রহী হয়ে উঠছেন চাষিরা। বিনা চাষে বোনা হলেও সার-কীটনাশক ও শ্রমিক মজুরিসহ আনুষঙ্গিক খরচ এবার বেড়েছে। এবার যদি বাজারমূল্য কম হয় তাহলে লোকসান গুণতে হবে তাদের। তবে ফলন ভালো হওয়ায় আশাবাদী তারা।
তাড়াশ উপজেলা কৃষি অফিসের তথ্যেমতে, শীতের শুরুতে নভেম্বর-ডিসেম্বর মাসের ভেজা মাটি রসুন চাষের জন্য উপযোগী। দিনে দিনে চলনবিল অঞ্চলে বিনা চাষে রসুনের আবাদ কৃষকদের কাছে জনপ্রিয় হয়ে উঠছে। খরচ কম, ফলন ভালো ও লাভের পরিমাণও বেশি, তাই তারা রসুন চাষে আগ্রহী হয়ে উঠেছেন। শুধুমাত্র তাড়াশেই প্রতি বছর ৫১০ হেক্টর জমিতে রসুনের আবাদের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হলেও এবছর রসুনের দাম নিয়ে ধোয়াসায় থাকায় কিছু কম হয়ে ৪৭০ হেক্টর জমিতে রসুনের আবাদ হয়েছে। এদিকে বিনা চাষে রসুন আবাদ করলেও সার-বীজ-কীটনাশক দিয়ে বিঘা প্রতি উৎপাদন খরচ ৩৫ থেকে ৪৫ হাজার টাকার মতো খরচ হয়। আর বিঘা প্রতি গড়ে ২৭মণ রসুন উৎপাদন হয়েছে।
তাড়াশ উপজেলা কৃষি অফিসার কৃষিবিদ আব্দুল্লাহ আল মামুন বলেন, উপজেলায় ৪৭০ হেক্টর জমিতে রসুনের চাষ হয়েছে। ফলনও বেশ ভালো হয়েছে। আশা করছি, বর্তমানে বাজার দরের চেয়ে আরও দাম বাড়বে। এসব রসুন দেশের চাহিদা অনেকটাই পূরণ করবে। যার উৎপাদন হয়েছে হেক্টর প্রতি গড়ে ২৭ মণ।