জহুরুল ইসলামঃ
সিরাজগঞ্জের বেলকুচিতে পাঁচ কোটি ২২ লক্ষ ৫০ হাজার টাকা আত্মসাৎ এর অভিযোগে, জনতা ব্যাংক তামাই শাখার ব্যবস্থাপক সহ তিনজনকে পুলিশে হস্তান্তর করেছে ব্যাংক কর্তৃপক্ষ।
রবিবার (২৪ মার্চ) রাতে অভিযুক্ত ব্যাংক কর্মকর্তাদের বেলকুচি থানায় হস্তান্তর করা হয়। পরে সোমবার( ২৫ মার্চ) সকালে বেলকুচি থানা পুলিশ তাদের ৫৪ ধারায় আটক দেখিয়ে আদালতে প্রেরণ করেন।
আটককৃত ব্যাংক কর্মকর্তারা হলেন,
সিরাজগঞ্জ ধানমন্ডি পৌর এলাকার হারান শেখের ছেলে ও জনতা ব্যাংক তামাই শাখার ব্যবস্থাপক আল আমিন (৪২) , বগুড়া ধুনট থানার হাবিবুর রহমান এর ছেলে ও জনতা ব্যাংক তামাই শাখার সহকারী ব্যবস্থাপক রেজাউল করিম (৩৪) , সিরাজগঞ্জ সদর থানার কাদাই গ্রামের জিয়াউল হকের ছেলে ও জনতা ব্যাংক তামাই শাখার
ব্যাংক অফিসার রাশেদুল ইসলাম (৩১)
লিখিত অভিযোগ পত্র সূত্রে জানা যায়, জনতা ব্যাংক পিএলসি সিরাজগঞ্জ এরিয়া অফিসের ডেপুটি জেনারেল ম্যানেজার নজরুল ইসলাম, ২০ মার্চ এরিয়া অফিসের আরও দুই জন কর্মকর্তা কে সঙ্গে নিয়ে জনতা ব্যাংক পিএলসি, তামাই শাখা পরীক্ষামূলক পরিদর্শন করেন, পরিদর্শনকালে, শাখা ব্যাবস্থাপক আল আমিন কে কর্তৃপক্ষের অনুমতি ব্যাতিত অনুপস্থিত পান, এ সময় ক্যাশ যাচাই করে দেখতে পান যে, তিনি গত ১ জানুয়ারী ২০২২ হইতে ১৪ মার্চ ২০২৪ ইং তারিখের মধ্যে- বিভিন্ন সময়ে আটককৃত ব্যাংক কর্মকতা সহ আরো ৩/৪ জন অজ্ঞাতনামা ব্যাক্তির প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষ সহযোগিতায়, উক্ত ব্যাংজের ভোল্টে রক্ষিত থাকা নগদ ৫ কোটি ২২ লক্ষ ৫০ হাজার টাকা, আত্মসাৎ করেন।
পরবর্তীতে ২৪ মার্চ ২০২৪ তারিখে ব্যবস্থাপক আল-আমিন উক্ত ব্যাংকে যোগদান করিলে, ব্যাংকের হিসাবের গড়মিল থাকায়, ভোল্টে রক্ষিত টাকার মধ্যে উক্ত আত্মসাৎকৃত টাকার বিষয়ে ব্যাংকের উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের নিকট স্বীকারোক্তি প্রদান করেন এবং সঠিক হিসাব দিতে ব্যর্থ হন।
তিনি আত্মসাৎকৃত টাকার দায় স্বীকার করে দায় পরিশোধের নিমিত্তে সানট্রি ডিপোজিট হিসাবে ২০ লক্ষ টাকা স্বেচ্ছায় ব্যাংকে জমা করেন এবং অবশিষ্ট টাকা জমা করিতে ব্যর্থ হন।
পরে জনতা ব্যাংক পিএলসি সিরাজগঞ্জ এরিয়া অফিসের ডেপটি জেনারেল ম্যানেজার নজরুল ইসলাম অভিযুক্ত ব্যাংক কর্মকর্তাদের বেলকুচি থানা পুলিশের কাছে হস্তান্তর করেন,
এ ব্যাপারে তার কাছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, বিষয়টি কেন্দ্রীয় অফিস তদন্ত করছে, তদন্ত সাপেক্ষে উর্ধতন কর্তৃপক্ষ তাদের ব্যাপারে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করবেন।
সোমবার (২৫ মার্চ) সকালে জনতা ব্যাংক তামাই শাখায় গিয়ে দেখা যায়, ব্যাংকে থমথমে অবস্থা বিরাজ করছে, বাংলাদেশ ব্যাংকের দুই কর্মকর্তা তদন্ত কাজ পরিচালনা করছেন, এ সময় বাংলাদেশ ব্যাংকের সহকারি পরিচালক ওমর ফারুক বলেন, বাংলাদেশ ব্যাংক দুই সদস্য বিশিষ্ট তদন্ত কমিটি গঠন করে দিয়েছেন, আমিসহ যুগ্ম পরিচালক এস. এম সাহাদৎ হোসেন বিষয়টি তদন্ত করে দেখছি,তদন্তের পর বোঝা যাবে কি হয়েছে,তারপর তদন্ত সাপেক্ষে উর্ধতন কর্তৃপক্ষ প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করবেন।
এসময় সদ্য যোগদান কৃত শাখা ব্যবস্থাপক কামরুল হাসান বলেন, আমি আজই যোগদান করেছি,গতকাল পর্যন্ত কি হয়েছে আমি কিছু জানি না, আপনারা ঊর্ধতন কর্তৃপক্ষের সাথে যোগাযোগ করলে বিস্তারিত জানতে পারবেন।
ব্যাংকের গ্রাহক, তামায় হুজুর মার্কেটের সুতা ব্যবসায়ী আব্দুল আউয়াল বলেন, এই ব্যাংকটা তামাই গ্রামের সবচেয়ে প্রাচীনতম ব্যাংক, এই ব্যাংকের মাধ্যমে তামাই গ্রামে ব্যাংকিং কার্যক্রমের যাত্রা শুরু হয়
প্রায় ৮-১০ দিন হল গভীর রাত পর্যন্ত অডিট হচ্ছে, তাও ব্যাংকের ম্যানেজারের অনুপস্থিতে, আগের বেশ কয়েকজন ম্যানেজারকেউ অডিট কার্যক্রমে অংশগ্রহণ করতে দেখেছি, বিষয়টি এলাকাবাসীর মনে গভীর উদ্যেগ সৃষ্টি করেছে, এ ঘটনায় গ্রাহকদের মধ্যে একটা আতঙ্ক সৃষ্টি হবে,
ব্যাংকের আরেক গ্রাহক
হুজুর মার্কেটের সুতা ব্যবসায়ী মোঃ শামীম বলেন , নিরাপত্তার জন্য আমরা ব্যাংকে টাকা রাখতাম, ব্যাংকেই যদি এরকম ঘটনা ঘটে, তাহলে আমরা টাকাটা রাখবো কোথায়?
এ ব্যাপারে জানতে চাইলে, বেলকুচি থানা অফিসার ইনচার্জ আনিসুর রহমান বলেন, জনতা ব্যাংক সিরাজগঞ্জ এরিয়া ম্যানেজার নজরুল ইসলাম আমাদের কাছে একটি লিখিত অভিযোগ দেন,এবং তামাই শাখার শাখা ব্যবস্থাপক, আল – আমিন সহ অভিযুক্ত তিন ব্যাংক কর্মকর্তাকে আমাদের কাছে হস্তান্তর করেন, অভিযোগটি দুদকের তফসিল ভুক্ত হওয়ায় সেটি দুদকের কাছে প্রেরণ করা হয়েছে , এবং যে তিনজনকে আমাদের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে,তাদের কে ৫৪ ধারায় আটক দেখিয়ে আজ সোমবার (২৫ মার্চ ) সকালে আদালতে প্রেরণ করেছি।
।