নিজস্ব প্রতিবেদকঃ
সিরাজগঞ্জের শহীদ এম মনসুর আলী মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল এর ছাত্র আরাফাত আমীন তমাল নিজ শিক্ষকের গুলিতে গুলিবিদ্ধ হয়েছেন। সোমবার দুপুরের দিকে কলেজের শ্রেণিকক্ষে এ ঘটনা ঘটে বলে জেলার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার হান্নান মিয়া জানান।
আহত শিক্ষার্থী তমালের পায়ে গুলি লেগেছে। তাকে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। তিনি অষ্টম ব্যাচের তৃতীয় বর্ষের ছাত্র, তার বাড়ি বগুড়ায় ।
এ সময় কানের পাশ দিয়ে গুলি যাওয়ায় আরেক ছাত্রীও অসুস্থ হয়েছেন। তবে তাৎক্ষণিকভাবে তার নাম জানা যায়নি। তিনি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন।
আহত তমালের বন্ধু প্রত্যক্ষদর্শী মারুক হাসান বলেন, আমাদের মেডিকেল কলেজের অধ্যাপক ডাঃ রায়হান শরীফ স্যার সব সময় ক্যাম্পাসে পিস্তল নিয়ে ঘুরতো, ছাত্র-ছাত্রী এমনকি অন্যান্য স্যারদেরকেউ তিনি ভয় দেখাতেন, অনেক ছাত্রের মাথায় পিস্তল ধরতেন, ভয় দেখাতেন তবে গুলি করতেন না, আজ আমাদের মৌখিক পরীক্ষা ছিল, প্রশ্ন শুরু করার পূর্বেই তিনি আমাদের উদ্দেশে বলেন, তোমাদের কারও কি পোষা প্রাণী আছে? আমার একটা পোষা প্রাণী আছে।
“এই বলে তিনি তার সঙ্গে থাকা একটি কালো ব্যাগ থেকে পিস্তল বের করে আমাদের দেখিয়ে বলেন, এটা হচ্ছে আমার পোষাপাখি।” এটাকে এভাবে ধরতে হয়, এভাবে গুলি করতে হয়,এভাবে দেখাতে দেখাতেই তিনি কোন কারণ ছাড়াই,ঠান্ডা মাথায় রায়হানের পায়ে গুলি করে বসেন,
এরপরই ক্লাসরুমে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে। শিক্ষার্থীরা হুড়োহুড়ি শুরু করেন। একপর্যায়ে তারা শিক্ষক রায়হান শরীফকে আটকে রাখেন। কলেজে গোলযোগ চলছে। শিক্ষার্থীরা বিক্ষোভ করছেন। সেখানে উত্তপ্ত পরিস্থিতি বিরাজ করছে,বিক্ষুব্ধ ছাত্র-ছাত্রীরা ক্লাস ও পরীক্ষা বর্জনের ঘোষণা দিয়েছে।
খবর পেয়ে পুলিশ গিয়ে রায়হান শরীফকে উদ্ধার করে এবং তার কাছে থাকা পিস্তলটি জব্দ করা হয়েছে বলে জানান অতিরিক্ত পুলিশ সুপার হান্নান মিয়া।
তিনি আরও বলেন, “পিস্তলটি ওই শিক্ষকের নিবন্ধিত কিনা এখনও যাচাই করা যায়নি। শিক্ষক আমাদের হেফাজতে আছেন। আমরা শিক্ষার্থীদের শান্ত করার চেষ্টা করছি। ছাত্র-ছাত্রীদেরকে শিক্ষকের শাস্তির আশ্বাস দেওয়া হয়েছে।
প্রত্যক্ষদর্শী মারুফ আরো বলেন, সপ্তাহখানেক পূর্বে একদিন ক্লাসে তমাল ও শ্রাবণ কি একটা ব্যাপারে একটু হাসাহাসি করছিল, তখন শরীফ স্যার তাদের দুজনকে দাঁড় করিয়ে বলেন, আমি কি তোদের সাথে মজা করছি যে তোরা হাসাহাসি করছিস,তখন স্যার তমালকে উদ্দেশ্য করে বলে “আমি তোকে দেখে নেব, তোর জীবন হেল করে দিব, তারপর থেকে প্রত্যেক মৌখিক পরীক্ষায় স্যার তমালকে আটকে দিত,
এ ব্যাপারে মেডিকেল কলেজের অধ্যক্ষ আমিরুল ইসলাম চৌধুরী বলেন, আমি ঢাকায় ছিলাম ঘটনার ব্যাপারে আমি শুনেছি, আমি দ্রুতই রওনা করেছি, আমি যতটুকু জানি,পুলিশ তাকে তাদের হেফাজতে নিয়েছে,কলেজের পক্ষ থেকে তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে, তদন্ত সাপেক্ষে প্রয়োজনীয় বিভাগীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে, ছাত্রদের অভিযোগের ব্যাপারে তিনি বলেন, অভিযোগ সত্য, তিনি বলতেন তার পিস্তল লাইসেন্স করা, তারপরও বিষয়টির আইনগত দিক পর্যালোচনা সাপেক্ষে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য আমি ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানিয়েছিলাম।