জহুরুল ইসলাম:
সিরাজগঞ্জের এনায়েতপুরে উত্ত্যক্ত করার মামলায় গ্রেপ্তার ৪ আসামীর মধ্যে থানা আওয়ামীলীগ নেতা রাশেদ উদ্দিন ভূঁইয়াকে (৪২) জামিনে মুক্তি হয়েছেন। এজন্য বখাটেদের পক্ষ নেয়া দলের কয়েক নোতা এনায়েতপুর থানা আওয়ামী লীগ কার্যালয়ে তাকে ফুলের মালা দিয়ে সংবর্ধিত করেছেন। বুধবার (২৮ ফেব্রুয়ারি) রাতে থানা আওয়ামী লীগের নেতৃবৃন্দের উপস্থিতে তাকে সংবর্ধনা দেয়া হয়। এ সংক্রান্ত বেশকিছু ছবি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়েছে। এ নিয়ে নিন্দার ঝড় বইছে সর্ব মহলে। এর আগে বুধবার বিকেলে সিরাজগঞ্জ আমলী আদালতের (এনায়েতপুর-চৌহালী) বিচারক নাহিদ রহমান শরীফ মামলাটির শুনানী শেষে গ্রেফতারকৃত ৪ আসামীর মধ্যে তাকে জামিন মঞ্জুর করেন ও বাকি ৩জনকে জেলহাজতে পাঠানোর নির্দেশ দেন।
উত্ত্যক্ত করার মামলায় গ্রেপ্তার এনায়েতপুর থানা আওয়ামী লীগের দপ্তর সম্পাদক রাশেদ উদ্দিন ভূঁইয়া জামিনে মুক্ত হয়ে এলাকায় এলে বুধবার সন্ধ্যায় দলীয় কার্যালয়ে তাকে ফুলের মালা গলায় দিয়ে সংবর্ধিত করা হয়। এ সংক্রান্ত বেশকিছু ছবি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়লে এলাকার জনসাধারণ মানুষের মধ্যে সমালোচনা শুরু হয়। ফেসবুকে ছড়িয়ে পড়া ওই ছবি গুলোতে এনায়েতপুর থানা আওয়ামী লীগের সহ সভাপতি রাশেদুল ইসলাম সিরাজ সহ বেশ কিছু দলীয় নেতা কর্মীদের দেখা যায়। সেই সাথে এই মামলার ৫ নম্বর পলাতক আসামী থানার গোপীনাথপুর গ্রামের আবদুস সালামের ছেলে মোন্টু কেও দেখা যায়।
মামলার বাদী বাবু মির্জা অভিযোগ করে বলেন, মেয়েকে উত্ত্যক্ত করার প্রতিবাদ করতে গিয়ে আমার আত্মীয় পরিজন সহ আমরা সবাই এখন নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছি। গ্রেফতারকৃতদের মধ্যে একজন জামিনে মুক্ত হয়ে এলাকায় আমার ও আমার পরিবারের বিরুদ্ধে নানা অপপ্রচার চালাচ্ছে। বিষয়টি মিমাংসা করে নিতে নানা ভাবে ভয়ভীতি দেখিয়ে আমাদের ওপর চাপ সৃষ্টি করা হচ্ছে।
এনায়েতপুর থানা আওয়ামী লীগের সহসভাপতি রাশেদুল ইসলাম সিরাজ জানিয়েছেন, এনায়েতপুর থানায় উত্ত্যক্ত করার বিষয়ে মামলা হয়েছে। আসামি গ্রেফতার হয়েছে এ বিষয়ে আদালতে বিচার হবে। তবে গ্রেপ্তার চার আসামির মধ্যে থানা আওয়ামী লীগের দপ্তর সম্পাদক রাশেদ উদ্দিন ভূঁইয়ার বিষয়ে আমরা যতদূর জানি এ ঘটনার সাথে তাঁর সম্পৃক্ততা নেই। যে কারনে তিনি একটি মিথ্যা মামলায় গ্রেফতার হলেও আদালত তাকে জামিনে মুক্তি দেয়ায় একজন দলের নেতা হিসেবে আমরা তাকে ফুলের মালা দিয়ে বরণ করেছি। এছাড়া এখানে অন্য কিছু ভাবার সুযোগ নেই। আমরাও এই মামলার সুষ্ঠু বিচার কামনা করছি।
সিরাজগঞ্জের চৌহালীতে স্থানীয় এক সাংবাদিকের মেয়ে এনায়েতপুরের আইসিএল স্কুলের নবম শ্রেণিতে পড়ে। তাঁর মেয়ে বিদ্যালয়ে যাওয়ার পথে খোকশাবাড়ির বখাটে আজিজুল হক হৃদয় উত্ত্যক্ত করত। বিষয়টি মেয়েটির বাবা জেনে ওই বখাটেকে বুঝিয়ে তাঁর মেয়েকে উত্ত্যক্ত করতে নিষেধ করেন। এতে বখাটে আজিজুল ক্ষিপ্ত হয়ে ওঠে। এর জের ধরে গত মঙ্গলবার বিকেলে মেয়েটি স্কুল থেকে বাড়ি ফেরার পথে চৌহালীর কেজির মোড় এলাকায় রাস্তার পাশে ওত পেতে থাকা আজিজুল আবারও তাকে উত্ত্যক্ত করতে থাকে। একপর্যায়ে মেয়েটির হাত ও ওড়না ধরে টানাটানি করে এবং তার পথ রোধ করে আটকে রাখে।
মেয়েকে উত্ত্যক্ত করার খবর পেয়ে বাবা দৌড়ে ঘটনাস্থলে ছুটে গিয়ে এর প্রতিবাদ করলে বখাটে আজিজুলসহ আরও কয়েকজন মিলে দেশীয় অস্ত্র নিয়ে তার ওপর আক্রমণ করে বেধড়ক মারধর করে। এ ঘটনায় ওই মেয়ের বাবা বাদী হয়ে থানায় বখাটে ও কিশোর গ্যাংয়ের গ্রুপের লিডার লম্পট রোকন ভুঁইয়া সহ ৭ জন নামীয় ও আরো ১০/১৫ জন অজ্ঞাত আসামী করে থানায় মামলা করলে পুলিশ ৪জনকে গ্রেপ্তার করে আদালতে পাঠিয়ে দেয়। জামিনে মুক্তি পাওয়া থানা আওয়ামী লীগ নেতা রাশেদ উদ্দিন ভূঁইয়া ওই মামলার এজাহারভুক্ত ৪ নম্বর আসামী।